Ajanta Caves: The Harmony of Nature and Architecture

Featured

“Where the Crafts of Men Glorify the Creation of God”

by Mahinul Haque

(The Ajanta Caves are 29 rock-cut Buddhist cave monuments which date from the 2nd century BCE to about 480 CE in Aurangabad district of Maharashtra state of India)

View of the Ajanta Caves ©Author

It was a rainy morning when we arrived at the foothill of the Ajanta Caves, a few hour drive away from the city of Aurangabad. After 26 hours of train journey from Kolkata to Bhusawal, and a ridiculous amount of “veg biryani” in the train station, it was such a great relief to find ourselves into such a breathtakingly beautiful environment: consisting of lush green forest and mountains; and not to mention the caves!

View of the Ajanta Caves ©Author

The 29 rock-cut cave monuments of Ajanta are located on the side of a rocky cliff, that is on the north side of a U-shaped gorge on the small Waghur river, right in the outskirt of the Deccan plateau. A succession of waterfalls is found further round the gorge, and we could hear the sound of falling water from outside the caves. To be honest, it felt like a surreal world of its own, and we were experiencing something marvelous!

Inside a Cave ©Author

The caves appeared as if they were an extension of the surrounding natural elements. It was hard to believe this gigantic man-made rock-cut structure was constructed from a single monolithic stone which encompassed the body of the adjacent mountain cliff. And the caves became an integral part of the surrounding environment over the years, as if nature reclaimed what was its own once.

An Example of Rock-cut Temple in Ajanta ©Author

Constructed over different periods of time, under Satvahana dynasty and Vakataka dynasty, the caves include paintings and rock cut sculptures; which still exist as among the finest surviving examples of ancient Indian art, particularly expressive paintings, such as Jataka tales, i.e the Buddhist legends describing the previous births of the Buddha, and they uniquely present emotion through gesture, pose and form. Additionally, the ceiling is ornately decorated with colorful flora, fauna, figures, and geometric designs. Also, the sculpture artists likely worked at both excavating the rocks and making the intricate carvings of pillars, roof and idols; further, the sculpture and painting work inside a cave were an integrated parallel tasks. We could not help feeling awestruck at these wonderful denominations.

An Example of Rock-cut Temple in Ajanta ©Author

The harmony between the architecture of the magnificent caves and the surrounding environment is something that has been shaped through the passage of time since its inception. Even now, it is a rather convenient example of how architecture can blend with its surrounding environment without causing disruption or distraction or pose any major threat to the ecology and ecosystem. We witnessed wildlife getting used to with the architecture of the caves, and the tourism that flourished with it.

View of the Ajanta Caves ©Author

Monkeys literally rule the place! They wander around the stone-carved passages, jump from excavated columns to roofs, lie down, take a nap, or do whatever they want almost without giving a second thought about the tourists that come to visit here. Unless of course it’s time to steal away some food or snatch the camera from the hands of an unaware ‘victim’. So, we had to be super careful when we were roaming around these mighty monkeys and their benevolent kingdom!

Author (in the right) and his Friends

The whole thing seemed very natural to us. The architecture, the nature, the sculpture, the environment all co-existing in the same place without causing any turbulence for one another. This balance and harmony is preserved since more than a thousand year! Despite its importance as a religious sanctuary and major tourist destination, the full extent of the significance of Ajanta caves is much more than that, from the perspective of the natural preservation and the environmental hierarchy. In short, Ajanta is a cradle of phenomenon and wonder, where architecture meets nature, and the crafts of men glorify the creation of God with skill and wisdom. That’s why millions of tourists visit this site each year. I, personally, am in love with the marvel of Ajanta, and wish to go back to the sacred abode again.

(originally published in the Daily Observer; July 26, 2018 issue; link- http://epaper.observerbd.com/2018/07/26/index.php)

স্থান, কাল ও অস্তিত্ব

 (আরাতা ইসোজাকি একজন জাপানী স্থপতি। বর্তমান সময়ে যেসব স্থপতি সারা বিশ্বে তাদের কাজের মাধ্যমে স্থাপত্য অঙ্গনে অবদান রেখে চলেছেন, জনাব ইসোজাকি তাদের মধ্যে অন্যতম। কোন একটি নির্দিষ্ট স্টাইলের মধ্যে আবদ্ধ না থেকে প্রত্যেকটি প্রজেক্টকে আলাদা কনটেক্সট অনুযায়ী বিবেচনা করে কাজ করার জন্যে তিনি সুপরিচিত। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে অইতা মেডিকেল হল (১৯৬০), ফুজিমি কান্ট্রি ক্লাব (১৯৭৩-৭৪), কিতাকিয়োশো সেন্ট্রাল লাইব্রেরি (১৯৭৩-৭৪),  আর্ট টাওয়ার অব মিতো (১৯৮৬-৯০), দোমাস কাসা দেল হম্ব্রে (১৯৯১-৯৫) ইত্যাদি। জনাব ইসোজাকি তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৬ সালে RIBA গোল্ড মেডেল এবং  ২০১৯ সালে Pritzker প্রাইজ লাভ করেন।)

Pine Trees, by Hasegawa Tohaku by Hasegawa Tohaku

শব্দহীন নীরবতা অনুভব করার চেষ্টা করেছেন কখনো? একদম সুনশান নিঃস্তব্ধতা? সত্যি বলতে কি, নীরবতার ভাষাই সবচেয়ে সুন্দর। এবং, নিরেট শূণ্যতার মধ্যেই আমি খুঁজে পাই পরিপূর্ণ ঐশ্বর্য; যা আমাকে অস্তিত্বের মাহাত্ম্য অনুভব করতে শেখায়।

স্থান, কাল ও অস্তিত্ব

ধরুন, আপনি একটি চলচ্চিত্র তৈরি করতে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে আপনি কি করবেন? প্রথমত, আপনার চলচ্চিত্র নিয়ে আগ্রহ থাকতে হবে। ক্যামেরা নিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান কিংবা কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এবং অতি অবশ্যই আপনার মাথায় একটি গল্প থাকতে হবে; যে গল্পটি আপনি বলতে চান।

কিন্তু, কাজ শুরু করে দেয়ার পর এক পর্যায়ে হয়ত দেখবেন যে, বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন আইডিয়া একের পর এক আপনার মাথায় আসা শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দুইটি ঘটনা ঘটতে পারে। হয়, আপনার মাথায় সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাবে। অথবা, আপনার গল্পটি ঈষৎ পরিমার্জিত হয়ে আগের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। এক্ষেত্রে আপনাকে ঠান্ডা মাথায় সুস্থির চিত্তে সূক্ষ্ম কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যার উপর আপনার চলচ্চিত্র নির্মাণের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। আপনি যদি আইডিয়ার ভীড়ে হারিয়ে যান, তাহলে আপনার চলচ্চিত্র কখনো আলোর মুখ দেখবেনা।

এই যে তাৎক্ষণিক বিচক্ষণতা, যা আপনাকে অথৈ সাগরে ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করবে, অর্থাৎ, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করবে- আমি মনে করি, একজন শিল্পী বা নির্মাতার জন্য এই বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

কালবিহীন স্থান

Japanese Kanji symbol for 'Ma'যেকোন সৃজনশীল কাজে ‘স্থান’ (Space) এবং ‘কাল’ (Time) এর প্রাসঙ্গিকতা এবং গুরুত্ব অপরিহার্য। কিন্তু, কেবল স্থান আর কালের সমীকরণই সবকিছুকে পূর্ণতা দিতে পারে না। আমাদের জাপানী দর্শনে “মা” (ma/) নামে একটি কনসেপ্ট আছে, যা দ্বারা পাশাপাশি দুটি বস্তুর মধ্যে অন্তর্নিহিত স্থানটিকে বুঝায়। ধরুন, দুইটি বস্তুকে পরস্পরের সংস্পর্শে পাশাপাশি রাখা হলো। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে যে এদের মধ্যে কোন ফাকা স্থান নেই। কিন্তু আসলেই কি তাই? না। আপনি যত কাছেই দুটো বস্তুকে রাখুন না কেনো, তারা কখনো এক হয়ে যাবেনা। তাদের মধ্যে অবশ্যই কিছুটা শূণ্যস্থান থাকবে। যেটা হয়তো আপনি খালি চোখে দেখতে পাবেন না। আপনাকে এই স্পেইসটা অনুভব করতে হবে। দুইটি বস্তু বা উপাদানের বাহ্যিক অস্তিত্বের মধ্যে বিরাজমান অদৃশ্য এই শূণ্যস্থানকেই জাপানী দর্শনে ‘মা’  হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

সহজভাবে বুঝার জন্যে আরেকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। আমরা কথা বলার সময় দুইটি শব্দ বলার ফাকে অল্প কিছুক্ষণের জন্যে থামি; অর্থাৎ, বিরতি নেই। কারণ, স্বল্পস্থায়ী এই নিঃশব্দতা দুটি শব্দের আলাদা অস্তিত্বকে জোরদার করে। কেউ যখন থেমে থেমে প্রতিটি শব্দকে আলাদাভাবে উচ্চারণ করে কথা বলে তখন আমরা স্পষ্টভাবে তার বক্তব্য বুঝতে পারি। দুটো শব্দের অন্তর্বর্তী এই নিঃশব্দকালই ‘মা’

আমাদের এটা মনে রাখতে হবে, আনুষঙ্গিক প্রেক্ষাপটে “স্থান” বা “স্পেইস” (space) এর সমীকরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ; যেহেতু, স্পেইস তৈরি করাই আমাদের স্থপতিদের কাজের মুখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু, অন্তঃস্থ শূণ্যস্থান  বা ‘মা’ তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ‘মা’ এর দৃশ্যমান বাহ্যিক অস্তিত্ব না থাকলেও, বিশ্বব্রক্ষ্মাণ্ডের সবকিছুর মধ্যেই এর উপস্থিতি রয়েছে। আমরাও জেনে বা না জেনেই সর্বক্ষেত্রে এর ব্যবহার করে থাকি। কারণ,অন্তঃস্থ স্থান ছাড়া পারিপার্শ্বিক স্থান বা স্পেইসকে পুরোপুরি উপলব্ধি করা যায়না, এবং স্পেইসের অস্তিত্বই অসার ও মূল্যহীন হয়ে পরে।

 

স্টাইলেই সমাধান?

আমি সবসময় নতুন কিছু তৈরি করতে চাই। তাই পরপর দুটো কাজ এক রকম হোক, সেটা আমি চাই না। নতুন এবং অনন্য কিছু সৃষ্টির মধ্যেই আমার আনন্দ। যারা সবসময় কোন ব্যক্তির কাজের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ধারা বা বৈশিষ্ট্য খুজতে চান, তারা হয়ত আমার কাজে হতাশ হবেন। কারণ, ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্টাইলের প্রচলিত এই রীতিতে আমি বিশ্বাসী নই। আমি মনে করি না যে আমাকে সবসময় কোন অভিন্ন রীতি অনুযায়ী কাজ করতে হবে। বরং আমার প্রত্যেকটি কাজ হবে স্বকীয়, অনন্য; যা আমার নিজস্ব ধারা হিসেবে বিবেচিত হবে।

আমি নির্দিষ্ট কোন স্টাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। আমি চাই সংশ্লিষ্ট পরিবেশ, পরিস্থিতি, এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কাজ করতে। এছাড়াও আমি মনে করি, পরিবেশ ও পরিস্থিতির ভিন্নতা অনুযায়ী উদ্ভত একগুচ্ছ সমস্যাকে স্থাপত্যের জ্ঞানের নিরীখে সমাধান করাই স্থপতিদের মূলমন্ত্র হওয়া উচিত। এবং বলাবাহুল্য, এ ধরনের কনটেক্সটনির্ভর এবং নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধানভিত্তিক স্থাপত্য প্রত্যেকটি প্রজেক্টের জন্য অবশ্যই আলাদা হবে।

একটি দ্বীপমাত্র!

ভৌগোলিকভাবে জাপান একটি দ্বীপরাষ্ট্র। অর্থাৎ, সমগ্র পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে, সূর্যোদয়ের দেশটি সাগরের মধ্যে ভাসমান একটি বিচ্ছিন্ন জনপদ মাত্র। তাই, আমি মাঝে মাঝেই আমাদের জাপানী সত্তার সীমারেখা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। কিন্তু, আদৌ কি এর কোন সীমানা আছে? একটি দ্বীপের কি তথাকথিত সীমানা থাকতে পারে? চারদিকে তো অথৈ জলরাশি! প্রকৃত কোন সীমানা বা দেয়ালের কোন অস্তিত্ব তো নেই।

তবে ইতিহাসের পাতা থেকে আমরা জানতে পারি যে, বিগত কয়েক হাজার বছরে বহুবার আমরা আমাদের অনন্য জাপানী স্টাইল তৈরি করতে পেরেছি, যা সারাবিশ্ব থেকে আলাদা; একান্তই আমাদের নিজস্ব। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, বিশেষ করে সত্তরের দশকের পর থেকে আমরা আমাদের নিজস্ব জগতের গণ্ডি থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছি। আমরা এখন বাহিরের অন্যান্য জাতি ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হচ্ছি, তাদের সাথে আমাদের মিথস্ক্রিয়া ঘটছে। আমরা বহির্বিশ্ব সম্পর্কে জানতে পারছি, এবং বহির্বিশ্বও আমাদের সম্পর্কে আগের চেয়ে ভালোভাবে জানতে পারছে। এই যে পারস্পরিক সম্পর্কের আদান প্রদান, এটা এর আগে কখনো হয়নি।

তবে একথা অনস্বীকার্য যে, সবকিছুর পরেও আমাদের একটা নিজস্ব জাপানী ধারা (style) রয়েছে; যা জাতি হিসেবে আমাদের সার্বজনীন চিন্তা- চেতনা এবং আদর্শের প্রতিফলন ঘটায়। কিন্তু, এটি আসলে সমষ্টিগত কিছু ধ্যান-ধারণা এবং সমন্বিত রুচিবোধের প্রতিচ্ছবি। এই ধারার আলাদা কোন বিশেষ অর্থ নেই, যদি না সংশ্লিষ্ট এই বিষয়গুলোকে গভীরভাবে অনুধাবন করা যায়। এক কথায় বলতে গেলে, একটি জাতির সামগ্রীক রুচিবোধ এবং এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আবহ সেই জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচায়ক; এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতিসত্তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে এর কোন বিকল্প নেই।

 

স্থাপত্যের প্রকৃতি

Tadao Ando
Tadao Ando, Photo © Kazumi Kurigami

আজকের দিনে সমাজব্যবস্থা অনেকাংশেই তথ্যকেন্দ্রিক (information-oriented) হয়ে যাচ্ছে; যার ধারাবাহিকতায় স্থাপত্যবিদ্যাও এই অবাধ তথ্যপ্রবাহের একটি অংশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। বলাবাহুল্য, ‘তথ্য’ হিসেবে স্থাপত্যের গুরুত্ব অগ্রাহ্য করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে যে, স্থাপত্যের সকল প্রায়োগিক দিকের মধ্যে কেবলমাত্র এই অংশটিতে ইদানীং বেশি জোর দেয়া হচ্ছে, যার প্রধান উদ্দেশ্য মানুষকে আকৃষ্ট করা। ফলশ্রুতিতে, উপাদান বস্তু (material object) হিসেবে স্থাপত্যকে তেমন একটা মূল্যায়ণ করা হচ্ছেনা। বরং, বিল্ডিংগুলোকে এমন চটকদার ভাবে ডিজাইন করা হচ্ছে যেন ফটোগ্রাফিতে দেখতে ভালো লাগে। আমরা জানি যে, অর্থনীতি এবং সমাজব্যবস্থার সাথে স্থাপত্যের নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। তাই, আর্থ-সামাজিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন স্থাপত্যকে অনেকাংশেই প্রভাবিত করে। যেমন, জাপানে জমির দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হওয়ায় অস্থায়ী বিল্ডিং তৈরি করার একটা প্রবণতা দেখা যায়, যাতে সহজেই যে কোন সময় বাড়িগুলো ভেঙ্গে ফেলা যায়, এবং পুনঃনির্মাণ করা যায়।

১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে মডার্নিজম ধারা যখন তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন কার্যকারিতা (functionalism) ও অর্থনৈতিক যুক্তিবাদিতার (economic rationalism) কারণে মডার্নিজমের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। কারণ, পোস্ট-ইন্ডাস্ট্রিয়াল সমাজ আস্তে আস্তে তথ্যকেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছিলো। এসময় বিভিন্ন নতুন ধারার আগমন ঘটতে থাকে; যার মধ্যে পোস্ট-মডার্নিজম অন্যতম। কিন্তু পোস্ট-মডার্নিজম ধারা তার উদ্দেশ্য বা অবজেক্টিভ সম্পর্কে কখনোই সুস্পষ্ট কোন ধারণা দেয়নি। বরং, এ ধারাতে মডার্নিজম দ্বারা পরিত্যক্ত ঐতিহাসিক ফর্ম এবং অলঙ্করণরীতি পরোক্ষভাবে পুনরায় ফিরিয়ে আনার একটা সূক্ষ্ম প্রচেষ্টা ছিলো; যা পোস্ট-মডার্নিজম ধারার সীমাবদ্ধতা হিসেবে গণ্য করা হয়। শুধুমাত্র আর্কিটেকচারাল ফর্ম নিয়ে কাজ করার কারণে মডার্নিজম দ্বারা উদ্ভুত সমস্যাগুলোর প্রকৃত কোন সমাধান পোস্ট-মডার্নিজম দিতে সক্ষম হয়নি। ফলশ্রুতিতে, পোস্ট-মডার্নিজম এখন মুমূর্ষু অবস্থায় আছে বলা যায়। এমতাবস্থায়, সময়ের খেয়াস্রোতে বাতিল হয়ে যাওয়া মডার্নিজমের মূল উপাত্তগুলো বর্তমান সময়ের নিরীখে পুনরায় বিবেচনা করা প্রয়োজন।

সব বিষয়কে সব সময় সর্বজনীন (generalize) করা যায়না। কারণ, তাহলে ব্যাপারটা একদল মানুষকে শুধুমাত্র “সংখ্যা” হিসেবে বিবেচনা করার মত হয়ে যায়। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে নিজস্ব আবেগ, ইচ্ছা এবং চাহিদা থাকে; যার সমন্বয়ে একজন মানুষের নিজস্ব স্বত্ত্বা গড়ে ওঠে; এবং এই কারণে প্রতিটি মানুষ একে অপরের চেয়ে আলাদা হয়। কিন্তু, আমরা যদি সর্বজনীনতা লাভের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত স্বকীয়তাকে অগ্রাহ্য করতে শুরু করি, তাহলে ধীরে ধীরে একজন ব্যক্তি তার স্বতন্ত্র “ব্যক্তিস্বত্ত্বা” হারিয়ে ফেলবে, এবং রূপকার্থে একটি বৃহৎ সংখ্যার ক্ষুদ্র এককে পরিণত হবে। স্থাপত্যের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি একই। ‘সর্বজনীন স্থাপত্য’ মতবাদের অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ বর্তমানে বিভিন্ন অঞ্চলের নিজস্ব স্থানীয় সংস্কৃতির জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে; কারণ, সর্বজনীনতার একটি অন্যতম মুখ্য দিক হচ্ছে আদর্শীকরণ (standardization)। আমরা যদি স্থাপত্যচর্চায় নির্ধারিত কোন  আদর্শ নীতিমালা অনুসরণের স্বার্থে স্থানীয় সংস্কৃতিকে অগ্রাহ্য করি, তাহলে বিশ্বের সব শহরের সব বিল্ডিংগুলো দেখতে একই রকম হয়ে যাবে; যেটা মোটেই প্রত্যাশিত নয়। এমতাবস্থায়, সভ্যতার অগ্রগতির স্বার্থে সাংস্কৃতিক উপাদান ত্যাগ করতে না চাইলে, আমার মনে হয় আমাদের স্থাপত্যের সংজ্ঞা নতুন করে ভাবতে হবে।

u5k94umbc150zzj9
Tadao Ando, Photo © Nobuyoshi Araki

এখন, প্রশ্ন আসতেই পারে, স্থাপত্য কি! আমার মতে, স্থাপত্য হচ্ছে অসংখ্য স্বতন্ত্র ব্যক্তির নিজস্ব আদর্শ অনুযায়ী করা কাজের সমষ্টি; যা তার দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং স্থানীয় জলবায়ুর প্রেক্ষাপট অবলম্বনে সৃষ্ট। এই স্থাপত্য সংস্কৃতির অংশ, সভ্যতার নয়। কিন্তু বর্তমানে স্থাপত্য তৈরির কাজ স্বতন্ত্র ব্যক্তি অর্থাৎ স্থপতিদের হাতে না দিয়ে বরং বিভিন্ন সংগঠনের হাতে ছেড়ে দেয়ার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। হাতের বদলে কম্পিউটারে কাজ হচ্ছে। সবকিছুতে এখন যান্ত্রিকতার ছোয়া। এক সময় স্বতন্ত্র ব্যাক্তিদের স্বপ্ন, উৎসাহ-উদ্দীপনা, আর নিরলস পরিশ্রমের ফসল হিসেবে যে অসাধারণ স্থাপত্যকীর্তি গড়ে উঠতো, এখন তা সংগঠনের নীতিমালার কাগজ, আর যান্ত্রিকতার বেড়াজালের সাধারণ গণ্ডির মধ্যে দিন দিন আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।

পরিশেষে, স্থাপত্য শুধুমাত্র সময়ের নিরীহ প্রতিফলনই ঘটায় না, এটি সময়ের সমালোচনা করতেও অনুপ্রেরণা যোগায়। এছাড়াও স্থাপত্য চিন্তাভাবনার স্বাধীনতার প্রতিনিধিত্ব করে। স্থাপত্য নিয়ে চিন্তা করা বলতে যে শুধুমাত্র বাহ্যিক অবস্থা বা ফাংশনাল সমস্যা নিয়ে কাজ করা বোঝায়, তা না। আমি বিশ্বাস করি, স্থপতিদের ফান্ডামেন্টাল ভিত্তি বা মূলনীতি নিয়ে প্রশ্ন করা শিখতে হবে। নিজস্ব কল্পনার জগৎ তৈরি করে নিতে হবে, যেখানে তারা স্থাপত্য নিয়ে মুক্তভাবে স্বপ্ন দেখতে সক্ষম। এবং অবশ্যই মানুষকে নিয়ে ভাবতে হবে। মানুষের জীবন, ইতিহাস, ঐতিহ্য, এবং জলবায়ু- কোনটাই বাদ দেওয়া যাবেনা। আমাদের অবশ্যই এমন আর্কিটেকচারাল স্পেইস তৈরি করতে হবে, যেখানে মানুষ বিভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবে- কবিতা কিংবা গানের মত; কখনো সে বিস্মিত হবে, কখনো নতুন কিছু আবিষ্কার করবে, কখনোবা উদ্দীপিত হবে, কখনো প্রশান্তি লাভ করবে, আবার কখনোবা হয়তো খুঁজে পাবে জীবনানন্দ। আমার মতে, এখানেই স্থাপত্যের সার্থকতা।

(তাদাও আন্দোর লেখা “Nature and Architecture” শীর্ষক প্রবন্ধ অবলম্বনে)

মুহূর্তের মাঝে অনন্ততা

(This is my Bengali interpretation of Architect Tadao Ando‘s article “The Eternal Within the Moment” about the traditional Japanese architecture in the modern context and its influence on his works)

Ise-jingu-Shrine-Geku
ইশে মন্দির

আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা জাপানের ঐতিহাসিক কানসাই অঞ্চলে। সেই সুবাদে আমি ভাগ্যবান, কারণ আমি ছোটবেলা থেকেই কিয়োতো, নারা এবং ওসাকার মতো প্রাচীন জাপানী শহরগুলোর ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য দেখার এবং বোঝার সুযোগ পেয়েছি। আমার দেখা অসংখ্য মন্দির, সমাধি এবং বাসগৃহের মধ্যে যে স্থাপনাটি আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে, তার নাম হচ্ছে “ইশে মন্দির” (Ise Shrine)। আবহমানকাল ধরে জাপানী সাম্রাজ্যের “তেনো সিস্টেম” (জাপানের সম্রাটকে জাপানী ভাষায় ‘তেনো’ ‘Tenno’ বলা হয়) এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই ইশে মন্দির আধ্যাত্মিকতার সার্বজনীন প্রতীক হিসেবে জাপানী জনগণের হৃদয়ে ঠাই করে নিয়েছে। এমনকি বর্তমান সময়েও এই মন্দিরটি জাপানের ঐতিহ্যবাহী নান্দনিক চেতনা প্রত্যেক জাপানীর মনস্তাত্ত্বিক জগতে বিকশিত করতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

ইশে মন্দিরে যাওয়ার জন্য দর্শনার্থীদের প্রথমে মন্দির সংলগ্ন ইসুজু (Isuzu) নদী পার হতে হয়। নদীর শান্ত পানির অবারিত স্রোত ঘেষে গড়ে ওঠা একটি সুগভীর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে একেবেকে চলে গেছে একটি সংকীর্ণ পাথুরে রাস্তা। এর মধ্য দিয়েই দর্শনার্থীরা মন্দির কম্পাউন্ডে পৌঁছায়। এরকম শান্ত-স্নিগ্ধ ভাবগাম্ভীর্যতাপূর্ণ পরিবেশ স্বাভাবিকভাবেই দর্শনার্থীদের মনে একটি অপার্থিব আবহ তৈরি করে। এভাবেই কালের পরিক্রমায় টিকে থাকা অদ্ভুত সুন্দর ইশে মন্দির প্রাচীন জাপানী নান্দনিকতা এবং জীবনযাত্রার অনন্য নিদর্শন হিসেবে আজো সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

শতবছর পরেও এই মন্দিরটির টিকে থাকার কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে আমরা দেখতে পাই যে, স্থানীয় “শিকিনেন-সেঙ্গু” (Shikinen-sengu) প্রথা মেনে প্রতি বিশ বছর পর পর এই মন্দিরটি পুরোপুরি পুনঃনির্মান করা হয়। শিকিনেন-সেঙ্গু একটি অভিনব প্রথা, যেখানে নির্দিষ্ট সময় পর পর কোন পবিত্র স্থাপনা সম্পূর্ণ নতুনভাবে তৈরি করতে হয়। এই ধরনের কোন প্রথার প্রচলন সারাবিশ্বে আর কোথাও দেখা যায়না। আনুমানিক ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে “নারা” পিরিয়ডে এই প্রথার সূচনা ঘটে, এবং আজ পর্যন্ত এটি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। মন্দির কম্পাউন্ডে পাশাপাশি দুইটি মন্দিরের জন্য নির্ধারিত স্থান আছে। এর মধ্যে একটি মন্দির অক্ষত থাকা অবস্থাতেই, সম্পূর্ণ একই রকম দেখতে, এবং একই গুণাবলীসম্পন্ন আরেকটি মন্দির পার্শ্ববর্তী সেই স্থানে তৈরি করা হয়। নতুন মন্দিরটি তৈরি করা হয়ে গেলে “শেঙ্গু” রীতির আচারানুষ্ঠান পালন করার পর পুরনো মন্দিরটি ধ্বংস করে ফেলা হয়। এখানে শেঙ্গু বলতে বোঝায়, দেবতাদের পুরনো শরীর ত্যাগ করে নতুন শরীর গ্রহণ করা। এভাবেই যুগ যুগ ধরে জাপানী শিন্তো (Shinto) ধর্ম-মতবাদের ঐশ্বরিক সোন্দর্যের অভিব্যক্তি সাধারণ মানুষের সামনে প্রকাশিত হয়ে আসছে। আর নির্মাণ পদ্ধতির এই অসাধারণ স্বকীয়তা এই প্রাচীন স্থাপনা এবং তার স্থাপত্যরীতিকে অত্যন্ত কার্যকরভাবে সংরক্ষণ করতে পেরেছে এবং হাজার বছর ধরে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের হাতে অমূল্য নিদর্শন হিসেবে পৌঁছে দিয়েছে।

amaterasu (1)
পাশাপাশি পুরনো ও নতুন মন্দির

“ইশে” মন্দিরের মাধ্যমে যে শুধুমাত্র প্রাচীন একটি স্থাপত্যশৈলীর বাহ্যিক কাঠামো আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে, তা নয়। বরং, এর সাথে স্বয়ং স্থাপত্যশৈলী এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল চিন্তাভাবনা ও ঐশ্বরিক রীতিনীতিও অক্ষুণ্নভাবে আমরা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছি। এই মন্দিরের প্রতিটি কলাম, প্রতিটি ইটের গাথুনি সাবলীলভাবে সাক্ষ্য দেয় এক আদিম, পবিত্র সৌন্দর্যের- যার বিশুদ্ধ সঞ্জীবনীশক্তি আবহমানকালধরে জাপানী জনগণের জীবনকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে আসছে।

জাপানী দর্শনের সাথে পশ্চিমা দর্শনের মূল একটি পার্থক্য হচ্ছে, পশ্চিমা দর্শন স্বতন্ত্র চেতনার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, যেখানে চিন্তা-চেতনায় প্রত্যেকে অপরের চেয়ে আলাদা। অপরদিকে জাপানীরা ঐতিহ্যগতভাবে সর্বেশ্বরবাদী (pantheistic) চেতনায় বিশ্বাসী। তারা বিশ্বাস করে ঈশ্বর সবকিছুর মধ্যে বিরাজমান, তিনিই সকল চিন্তা-চেতনার উৎস, এবং তিনিই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। সুতরাং এটা তারা অনুভব করে যে, পূর্ববর্তী যুগ সমূহ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আর্কিটেকচারাল ফর্মের মধ্যে ঐশ্বরিক এবং অদৃশ্য ধারণাগুলোর অব্যক্ত প্রকাশ ঘটে, হয়তো বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে কিছুটা পরিবর্তিত কিংবা পরি্মার্জিত রূপে। এছাড়াও, সেই প্রাচীনকাল থেকেই জাপানী্রা ক্ষয়িষ্ণু, ম্রিয়মাণ ও মৃতপ্রায় এর মধ্যে শাশ্বত ও চিরন্তনতার উপস্থিতি আবিষ্কার করতে চেয়েছে, কারণ তারা বিশ্বাস করতো যে, চিরন্তন বা শাশ্বত অনুভূতিকে স্বকীয় অন্তর্জ্ঞান দ্বারা অনুভব করা যায়, যদিও এর অস্তিত্ব অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। এক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে রুপকার্থে একটি ফুলের সাথে তুলনা করা যায়। একটি ফুল দেখতে সবচেয়ে সুন্দর লাগে, যখন এটি কলি থেকে পরিণত অবস্থায় পৌঁছায়। কিন্তু ফুলের এই অপার সৌন্দর্য খুব কম সময়ের জন্য স্থায়ী হয়, কেননা পরিণত অবস্থায় পৌঁছার সাথে সাথেই ফুলের পাপড়ি ঝরে যেতে থাকে, ফুলটি শুকিয়ে যায়, এবং একসময় মারা যায়। যদিও আমরা চাই, এই সৌন্দর্য চিরস্থায়ী হোক, কিন্তু বাস্তবে সেটা অসম্ভব। কারণ, এই পৃথিবীতে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। শাশ্বত ও অবিনশ্বরের জন্য আমাদের ব্যাকুলতা থাকলেও সবকিছুই ক্ষণিকের মধ্যে বিলীণ হয়ে যায়।

জাপানী ঐতিহ্য অনুসারে অবয়ব (form) এবং উপকরণের (material) সৌন্দর্যের সংজ্ঞা অনন্য। এর মধ্যে কিছু আছে স্পষ্টত প্রতীয়মান, যা সরাসরি দেখে বুঝে নেওয়া যায়। আর কিছু ব্যাপার আছে, যা খালি চোখে দেখা যায়না, বরং হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয়, এবং আবেগ ও বিচক্ষণতা ব্যবহার করে বুঝে নিতে হয়। আমি সবসময় আমার কাজে এই গুনাবলীসমূহ অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছি- কখনো স্বেচ্ছায়, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে; আবার কখনোবা অবচেতন মনে, কারণ আমি বিশ্বাস করি সনাতন এই দর্শন আমার দৈহিক স্বত্ত্বার সাথে মিশে আছে। স্পেনের সেভিলায় অনুষ্ঠিত “এক্সপো-৯২” এর জাপানী প্যাভিলিয়নে আমি আমার আজীবন লালিত এই চেতনার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করেছি। এই প্রজেক্টে আমার থিম (theme) ছিলো আবহমান জাপানের কৃষ্টি ও জলবায়ুর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা জাপানীদের অনন্য সংস্কৃতিকে স্থাপত্যের মাধ্যমে প্রদর্শন করা। আর একটি এক্সপোজিশন বিল্ডিং তৈরি করাই হয় অল্প সময়ের জন্য। অর্থাৎ যতক্ষণ প্রদর্শনী চলবে, ততক্ষণই এই বিল্ডিং এর স্থায়িত্বকাল। ঠিক এই কারণেই আমি এমন একটা স্থাপত্য সৃষ্টি করতে চেয়েছি, যেটার শারীরিক অস্তিত্ব হারিয়ে গেলেও, দর্শনার্থীদের মনে চিরদিন এর প্রভাব অম্লান হয়ে থেকে যাবে, এবং সকলের স্মৃতির মণিকোঠায় এর শাশ্বত উপস্থিতি নিশ্চিত হবে।

এ উদ্দেশ্যে আমি কাঠের তৈরি বিশালাকৃতির স্থাপনাটি নির্মাণ করি; এবং নির্মাণ উপকরণ হিসেবে কাঠ বেছে নেই, কারণ, ইট-পাথরের গাথুনিতে গড়ে ওঠা দেয়ালের অবলম্বনে সৃষ্ট ভিনদেশী সাংস্কৃতিক বলয়ের মানুষের কাছে কাঠের তৈরি একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা অবশ্যই জাপানীদের সংস্কৃতি ও নান্দনিক সচেতনতার প্রতিফলন ঘটাবে। আর এটার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে আধুনিক যুগে প্রযুক্তির যে অভূতপূর্ব উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে, তার কল্যাণে। আমরা জানি, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কাঠের স্থাপনা তোদাজি (Todaji) মন্দির জাপানের নারায় অবস্থিত। কিন্তু, মন্দিরটির স্ট্রাকচারাল মেথড সনাতন পন্থাবলম্বী হওয়ায় বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এর প্রয়োগ সম্ভব নয়। তাই, আমার স্বপ্নের স্থাপনাটির স্ট্রাকচারাল ভিত্তি দাঁড় করানো্র জন্য আমি আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির সাহায্য নেই।

জাপানের একটি অনন্য ল্যান্ডস্কেইপ গার্ডেনিং পদ্ধতির নাম হচ্ছে শাক্কেই (shakkei); যা কোন একটি সাইট বা জায়গার সহজাত বৈশিষ্ট্যসমূহকে অবয়বে রূপান্তর করার প্রচেষ্টা চালায়। প্রকৃতির ব্যাপারে জাপানীদের এই দুর্লভ দৃষ্টিভঙ্গি জাপানের ঐতিহ্যবাহী বিল্ডিং সংস্কৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে। আমি স্থাপত্যে এমন কিছু আনতে চাইনা যার অস্তিত্ব ইতোমধ্যে বাস্তব এবং স্পষ্টত প্রতীয়মান; বরং এক্ষেত্রে আমি স্থাপত্যে নতুন কিছু যোগ করতে চাই, যা বিমূর্ত ও নিরাকার, এবং যার অস্তিত্ব যুক্তি ও আবেগ উভয়ের সমন্বয়ে অনুভব করতে হবে। আর এই যুক্তি্বাদীতার প্রতিচ্ছবি হবে এমন- যেন পরিস্থিতির প্রয়োজনে এটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের মাধ্যমে নির্দ্বিধায় নিজেকে নতুন প্রেক্ষাপটের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে।

আমি প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ, যেমন- আলো, বাতাস ও পানি- স্থাপত্যের  জ্যামিতিক ও সুশৃঙ্খল কাঠামোর আবর্তে প্রবেশ করাতে চাই, যাতে এই নির্জীব জড়তার মধ্যে প্রাণের সঞ্চার ঘটে। পালাক্রমে জলবায়ুর অনিমেষ পরিবর্তন প্রতি মুহূর্তে মুহূর্তে স্থাপত্যের পারিপার্শ্বিক অবস্থার রূপান্তর ঘটায়। বিপরীতধর্মী উপাদান পরস্পরের সংস্পর্শে আসে, এবং এরূপ দ্ব্যর্থহীন সংমিশ্রণের ফলাফল হিসেবে জন্ম নেয় স্থাপত্যের পরিণত অভিব্যক্তি (expression), যার মর্মস্পর্শী উপস্থিতি মানবাত্মাকে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম; এবং যা আমাদেরকে “মুহূর্তের মাঝে অনন্ততা”- এর ক্ষুদ্র একটি প্রতিচ্ছবি অনুভব করার সুযোগ করে দেয়। সুতরাং, অনন্ত-চিরন্তনতার আবাস তার মধ্যেই, যে এর শাশ্বত-স্বর্গীয় উপস্থিতি উপলব্ধি করে, এবং তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে।

জিওফ্রে বাওয়ার স্থাপত্যকথন

(This is my Bengali interpretation of an article written by Architect Geoffrey Bawa regarding the vernacular architecture style of Sri Lanka)

Sri_Lanka_Arch_AKAL_82013947_AKAL_UpperDeck_View_G_A_H.(1)

আমার নিজস্ব গবেষণায় আমি অতীতের বিভিন্ন অধ্যায় সম্পর্কে জেনেছি ও বুঝার চেষ্টা করেছি। উদাহরণস্বরূপ আমি বলতে পারি, মধ্যযুগে ইতালীর পাহাড়ি এলাকায় গড়ে উঠা শহরগুলো, যেখানে জমকালো ও সহজাতপ্রবৃত্তির “মাসিং” (massing) এর প্রাধান্যতা ছিলো। যদিও কালের পরিক্রমায় এবং উদ্দেশ্যের প্রেক্ষাপটে এসব শহরে কিছুটা ভিন্নতা ছিল, কিন্তু সামগ্রীকভাবে এরা একটি চমৎকার দৃশ্যপট সামনে নিয়ে এসেছিল। এছাড়াও আমি বলতে পারি ইংরেজ গ্রামের বাড়ি এবং এর সাথে গড়ে উঠা উদ্যান এবং বাগান; গ্রীক, রোমান, মেক্সিকান এবং বৌদ্ধ সভ্যতার ধ্বংসস্তুপ, গ্রানাডার আলহামরা, রনশ্যাম্পের উপাসনালয়, রাজস্থানের মুঘল দুর্গসমূহ এবং পদ্মনবপুরামের বিস্ময়কর প্রাসাদের কথা। এছাড়াও প্রায়ই আমার চোখ আটকে যায় কোন একটি নিখুঁত ল্যান্ডস্কেইপে, কখনোবা একটি সাধারণ দৃষ্টিনন্দন ভবন, আবার কখনোবা একটি বিশাল জাকজমকপূর্ণ ভবনে। এরকম স্থাপনার সৌন্দর্য আমার চোখে ধরা দেয় বাস বা ট্রেইনের জানালা হতে, কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের জন্য, আবার কখনোবা এক বা দুইদিন ধরে; আবার কখনো বেশ কিছুদিন ধরে, ক্যামব্রিজ বা রোমের স্থাপনাসমূহের মত। এসব স্থাপনা, বাগান এবং ল্যান্ডস্কেইপের সৌন্দর্যের রেশ আমার অবচেতন মনে গেঁথে যায়, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানে আমার জন্য সহায়ক একটা ভূমিকা পালন করে। যেমন, সাইটের মধ্যে সঠিক জায়গায় স্থাপনাটি বসানো; বা ফ্রেইমের প্রয়োজনে কোন একটি ভিউকে জোর দেওয়া, বা স্পেইস তৈরি করা; কিংবা একটি রুমের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণে আলো ছায়ার আবহ সৃষ্টি করা। শ্রীলঙ্কার যেকোন ভাল স্থাপনার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো যে এগুলোতে অনুরাধাপুরা, পলোন্নারুয়া বা সিজিরিয়ার মন্দির কিংবা প্রাসাদসমূহের স্থাপত্যশৈলীর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা হয়েছে। এবং যুগের ধারাবাহিকতায় এই ব্যাপারটি বর্তমান পর্যন্ত চলছে। আর আমি শ্রীলঙ্কার দর্শনীয় স্থাপত্যকে- শুধুমাত্র শ্রীলঙ্কান স্থাপত্য বলতেই পছন্দ করি। ভারতীয়, পর্তুগীজ বা ডাচ, কিংবা সিংহলীয় বা ক্যান্ডীয়, বা ব্রিটিশ নয়। এইসব ভিনদেশীয় শাসনামলের স্থাপত্য নিদর্শনসমূহ আমার মতে শ্রীলঙ্কার নিজস্ব সত্তাকেই প্রতিনিধিত্ব করে ।

bawa1

যখন আমরা প্রাচীন এইসব স্থাপনার নিদর্শনসমূহের দিকে তাকাই, আমরা দেখতে পাই যে এরা শ্রীলঙ্কার দৈনন্দিন জীবনধারার অপরিহার্য বিষয়গুলোর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কিন্তু যদিও অতীতের উদাহরণ আমাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিতে পারে, এই মুহূর্তে আমাদের কি করতে হবে সেই ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ কোন ধারণা দিতে পারেনা। এটা সত্য যে বর্তমানের সাথে অতীতের অনেক “ম্যাটারিয়ালের” মিল আছে। এমনকি এদের ব্যবহার ও প্রয়োগও আগের মতই আছে; যদিও প্রায়োগিক কৌশল এবং বৈশিষ্ট্যে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এসব পুরনো এবং নতুন ম্যাটারিয়েল ব্যবহার করে আমাদের এমন একটি সমাজব্যবস্থার জন্য ডিজাইন করতে হবে যেটি এখন একটি কঠিন অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যেখানে জীবন অনেক গতিময় ও স্বাধীন, এবং যেখানে প্রয়োজনের তাগিদে বিশ্বাস ও জীবন ব্যবস্থায় এসেছে সংস্কার; আর উদারতান্ত্রিক সমঝোতা। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও, জীবনের সকল টানাপোড়েনের মধ্যে একটি ধ্রুবক সর্বদা বিদ্যমান; আর সেটা হচ্ছে জলবায়ু।

Geoffrey-Bawa

সকল স্থাপনার একটি অপরিবর্তনীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ছাদ। স্থান ও কাল নির্বিশেষে নান্দনিকতা এবং সুরক্ষার আবহ তৈরিতে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কখনো দেখা যায়, ছাদ, কলাম আর মেঝে নিয়েই একটি স্থাপনা গড়ে ওঠে; যেখানে ছাদের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি, আর ছাদ হয়ে ওঠে নিরাপদ আশ্রয়ের প্রতীক। একথা অনস্বীকার্য যে ছাদ এবং তার আকৃতি, বিন্যাস আর অনুপাত যেকোন ভবনের সবচেয়ে শক্তিশালী দর্শনীয় উপাদান।

এখন একটি অতি সাধারণ বস্তু নিয়ে আলোচনা করা যাক, যেটাকে এখন সিংহলীয় টাইল বলা হয়। কয়েক শতাব্দী আগে, আরব বণিকরা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে এ ধরনের অর্ধগোলাকার মাটির তৈরি “রুফিং টাইল” শ্রীলঙ্কায় নিয়ে আসে, যেগুলো ছাদের উপরে বসানো হতো। যদিও শ্রীলঙ্কায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় এখানের ছাদগুলো ঢালুভাবে তৈরি হত। পর্তুগীজ ও ডাচরাও একই ধরনের টাইল দিয়ে ছাঁদ বানাত, কিন্তু হল্যান্ডে ঠান্ডা বেশি হওয়ায় ডাচদের ছাদগুলো উপরের দিকে উঁচু হত। ক্যান্ডীয়দের দেশ পাহাড়ি হওয়ায় তারা মসৃণ ও সমতল আকৃতির কাদামাটির “টাইল” ব্যবহার করত। তাদের সভাকক্ষসমূহে শুধু কলাম বা স্তম্ভ থাকত, কোন দেয়াল ছিল না। যেন জীবনে চলার পথের একটি অমীমাংসিত উত্তর খুঁজে পাওয়া যেতো এখানে- একটি বড় ছাদ, যা একই সাথে ছায়া এবং সুরক্ষার কাজে লাগত; সাথে ছিলো মুক্ত বাতাসের অবাধ প্রবাহ, আর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের হাতছানি। “ফাংশান” (function) আর “ফর্ম” (form) এর নিবিড় সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই স্থাপনাতে একই সাথে নান্দনিকতা আর পরিকল্পনার সমাবেশ ঘটেছিল।

6781902998_3b449b16e4_b.jpg

এগুলো আমার প্রাথমিক ধারণা। এছাড়াও খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয় সামনে আসে; যেমন, কক্ষ, দরজা এবং জানালাসমূহের অনুপাত; ছাদের উচ্চতা ও পুরুত্ব; কক্ষের ভিতর থেকে একজন যদি তাকায় তাহলে কি দেখবে; কক্ষের বাইরের দৃশ্য কতটুকু খোলামেলা হবে ইত্যাদি। এসব ব্যাপার বিবেচনায় আনলে এদেরকে কোন নিয়ম দ্বারা আবদ্ধ করা যায়না। এবং এসকল নিয়ম নীতি সবসময় যে সব প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারে তাও না। আবেগ এবং যুক্তি এই দুইয়ের সমন্বয়েই আমাদের চলতে হবে। এই পর্যায়ে এসেই একজন স্থপতি তার সঞ্চিত জ্ঞানের বাইরে তার মেধা, মননশীলতা আর সৃজনশীলতার সমন্বয় ঘটিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা শুরু করেন। সেটা প্রায় অবচেতন মনেই ঘটে। আমি মনে করি, প্রত্যেক স্থপতিই এক্ষেত্রে আলাদা ও স্বকীয় প্রণোদনা নিয়ে কাজ করে্ন। আর বাস্তবতার নিরীখে একথা অনস্বীকার্য যে, কোন প্রজেক্টে চলার সময় একজন স্থপতিকে সকল ক্ষেত্রে প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ নিজের মত করে নিতে হয়।

আমার মতে একটি বিল্ডিংকে ভালোভাবে বুঝতে হলে এর চারপাশ এবং ভিতর দিয়ে আমাদেরকে হেঁটে যেতে হবে, এবং বিল্ডিং এর অভ্যন্তরের প্রতিটি স্পেইসকে অনুভব করতে হবে। এক স্পেইস থেকে অন্য স্পেইসের ভিউ, ল্যান্ডস্কেইপ ভিউ, বিল্ডিং এর বাহির থেকে ভিতর কিংবা এর চারপাশের ভিউ, বা এক কক্ষের ভিতর দিয়ে অন্য কক্ষ বা কোর্টের ভিউ- এই সব কিছুকেই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে, অনুধাবন করতে হবে। একই সাথে, বাইরের বাগান এবং ভিতরের কক্ষসমূহে আলো এবং ছায়ার খেলার ব্যাপারে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরী। স্পেইসের মধ্যে স্বস্তিদায়ক ও ফাংশনাল আবহ তৈরির পাশাপাশি আনন্দঘন পরিবেশের সম্ভাবনা তৈরি করার গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়। কেউ যদি একটি বিল্ডিং এর নকশা করা এবং সেটিকে বাস্তবে রূপ দান করার কাজটিকে উপভোগ করতে পারে, এবং এর মধ্য থেকে সৃষ্টির আনন্দ খুঁজে নেয়, তাহলে তার পক্ষে কাজটি পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করা অনেকটাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। প্রত্যেকটি প্রজেক্টই ভিন্নধর্মী; তাই সাইট ও উদ্দেশ্যের ভিন্নতা বজায় রেখে তৈরি করা প্রতিটি স্বতন্ত্র ডিজাইনের সাথে শতভাগ সম্পৃক্ত থেকে নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে কাজ শেষ করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থাপনার ভিত্তি হতে শুরু করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশে সমান গুরুত্ব প্রদান করা অবশ্যই বাঞ্চনীয়।

Geoffrey-Bawa-the-Best-of-Sri-Lankan-Architecture-10.jpg

ক্ষুদ্র এই পরিসরে আমি স্থাপত্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি; যদিও ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি যে স্থাপত্যকে ভাষা দ্বারা বর্ণনা করা যায়না। উদাহরণস্বরূপ, আমি সবসময়ই যে কোন জায়গায় যে কোন স্থাপনা দেখতে পছন্দ করি; কিন্তু সেই স্থাপনা সংক্রান্ত কোন নিবন্ধ পড়ার ব্যাপারে আমার তীব্র অনীহা। কারণ, আমি মনে করি যে, স্থাপত্যকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে কখনোই পুরোপুরি বুঝানো যায়না, বরং স্থাপত্যকে অনুভব করার মাধ্যমে নিজ থেকে আস্বাদন করে নিতে হয়। এখানেই স্থাপত্যের অপার মহীমা।